নিউ মার্কেটে গাড়ি পার্কিং ও মিরপুর সড়কে রিক্সা উচ্ছেদের পরবর্তী অবস্থা
যানজট নিরসনের নাম করে ইতিপূর্বে বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় একটি প্রকল্পের আওতায় মিরপুর সড়ক থেকে রিকশা উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্প পরবর্তী সময়ে যানজট আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া বাসের গতি কমেছে। মিরপুর সড়কে রিকশা উচ্ছেদ করা হলেও এখনও অনেক মানুষ ভেতরের (ধানমন্ডি এলাকার) সড়কগুলি দিয়ে রিকশা করেই চলাচল করছে। এর জন্য তাদের সময় ও খরচ দুইই বৃদ্ধি পেয়েছে। রিকশাচালকদের আয়ও কমেছে। মিরপুর সড়কে রিকশা বন্ধ করে ধানমন্ডি-১ (পুলিশ বক্স) থেকে নিউমার্কেট পর্যনত্দ রিকশা চলাচলের জন্য লেন প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু যাত্রী অনুপাতে লেনের জন্য জায়গা প্রদান না করায় মানুষকে সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই লেনটি দিয়ে একদিকে একটি সারিতে রিকশা চলতে পারে। আর লেনটি নিউমার্কেটের ভেতরের রাসত্দার সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় রিকশায় চলাচলের জন্য অনেক পথ ঘুরতে হয়। এছাড়া নিউমার্কেটের ভেতর দিয়ে প্রাইভেট কারসহ অন্যান্য অনেক ধরনের যানবাহন চলাচল করে। ফলে রিকশা নির্বিঘ্নে চলতে পারে না। সেখানে একটি রিকশা আটকা পড়লে পেছনে শত শত রিকশা আটকা পড়ে। এর জন্য ধানমিন্ড-১ নম্বর সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে রিকশা জট।
এই লেন-এ বরাদ্দকৃত জাযগা চাহিদানুযায়ী রিকশা চলাচলের জন্য যথেষ্ঠ নয়। অথচ লেনের বাইরে প্রায় সময় দুই লেন জুড়ে প্রাইভেট কার পার্কিং করা থাকে। সামান্য কয়েকজন মানুষকে পার্কিং সুবিধা দিতে গিয়ে রিকশা লেনে প্রয়োজনীয় জায়গা না দেওয়ায় হাজার হাজার মানুষের দূর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এখানে অবিলম্বে গাড়ি পার্কিং বন্ধ করে রিকশা যাত্রীদের সংখ্যানুপাতে লেনের জায়গা দিলে নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসা বৃদ্ধির সাথে সাথে জনসাধারণ উপকৃত হবে। সেই সাথে যানজট হ্রাসের সঙ্গে পরিবহণ ব্যবস্থায় সৃঙ্খলা ফিরে অসবে।
প্রাইভেট গাড়িতে গড়ে ২.২ জন যাত্রী থাকে। সে অনুযায়ী প্রাইভেট গাড়ি থেকে নিউমার্কেটের এই জায়গায় ঘন্টায় ৮৭ জন মানুষ সুুিবধা পাচ্ছে। একই জায়গায় রিকশা চললে প্রতি ঘন্টায় ৯ হাজার ৭৭ জন যাত্রী চলাচল করতে পারতো। এই লেন দুটিকে পার্কিং করার পরিবর্তে রিকশার জন্য বরাদ্দ দিলে ১০৩ গুন বেশি ব্যবহারযোগ্য করা সম্ভব।
নিউমার্কেটের এই লেনটি রিকশার জন্য বরাদ্দ দেয়া হলে প্রশ্ন উঠতে পারে প্রাইভেট গাড়ি কোথায় রাখা হবে? এর সমাধানে নিউমার্কেটের যেকোন একটি জায়গা পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া এবং জায়গা ও সময় অনুসারে খরচ নির্ধারণ করা। এ ধরনের নিয়ম করা হলে দুটি ইতিবাচক পরিবর্তন হবে। প্রথমত যারা এখন দীর্ঘ সময় গাড়ি পার্কিং করছে তারা কমসময় গাড়ি রাখবে বা পার্কিং খরচ কমাতে বিকল্প পরিবহণ ব্যবহার করবে। তাহলে প্রাইভেট গাড়ীতে যাতায়াত হ্রাস পাবে। দ্বিতীয়ত আশে-পাশের এলাকা হতে নিউমার্কেটে যাতায়াত করতে লোকজন রিকশা, সাইকেল বা হেঁটে চলাচলকে প্রাধান্য দেবে। এর মাধ্যমেও প্রাইভেট গাড়ীর ব্যবহার হ্রাস পাওয়ায় যানজট কমবে।
এই প্রক্রিয়ায় প্রাইভেট গাড়ী নিয়ন্ত্রণ করা হলে মিরপুর রোডে যানজট অনেকাংশে হ্রাস পাবে। গাড়ীর জন্য ঘন্টা অনুসারে অর্থ নেওয়ার ফলে পূর্বে পার্কিং করার জন্য যে পরিমান জায়গা প্রয়োজন হতো, তার থেকে কম ব্যবহার হবে, যারা মার্কেটে এসে দ্রুত কাজ সেরে চলে যেতে চায় তারা গাড়ি রাখার সুযোগ পাবেন। পার্কিং নিয়ন্ত্রণ হওয়ায় রাস্তায় রিকশা চলাচলের জায়গা বেরুনোর প্রেক্ষিতে আরো বেশি মানুষ যাতায়াত সুবিধার কারণে ব্যবসায়ীদের ক্রেতা সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
বিনামূল্যে অথবা কম মূল্যে পার্কিং সুবিধা প্রদান করলে যাদের গাড়ী আছে তারা হেঁটে, সাইকেলে বা পাবলিক পরিবহন অপেক্ষা প্রাইভেট গাড়ীতে যাতায়াত করতে উৎসাহী হয়। যা যানজট বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষের যাতায়াতে বাধা সৃষ্টি করায় ব্যবসার উপরেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে বেশি বেশি প্রাইভেট গাড়ী থাকলে যারা অন্যান্য মাধ্যমে আসতে চায় তাদের চলাচল বিঘি্নত হয়। গাড়ীর জন্য বিনামূল্যে পার্কিং সুবিধা দেয়ার অর্থ হচ্ছে অন্যদের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করা। ঢাকায় খুবই কম সংখ্যম মানুষের গাড়ি রয়েছে। প্রাইভেট গাড়ী ব্যবহারকারীদের প্রাধান্য দেওয়া হলে ব্যবসায়ী এবং বেশিরভাগ ক্রেতা সঙ্কটে পড়বে। একটি দোকানের সামনে বেশি গাড়ি খুব দৃষ্টিকটু দেখায় এবং চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এর জন্য অনেকই ওইসব দোকানে যেতে নিরুৎসাহ বোধ করে।
অনেক সৌখিন মানুষ আছেন হাঁটা পথে কি পাওয়া যায় সেগুলি লক্ষ্য করে এবং কিছু পছন্দ হলেই কিনে ফেলে। কিন্তু দোকানের সামনে গাড়ি থাকার কারণে মানুষ কিছু দেখতে না পাওয়ায় বিক্রি কমে যায়। যা ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্থ করে। দোকানের সামনে গাড়ি না থাকলে পথচারীরা বাইরে থেকে জিনিসপত্র দেখতে পায় এবং কোন কিছু দ্বারা আকৃষ্ট হলে ভেতরে প্রবেশ করে কেনাকাটার সুযোগ পায়।
বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে পার্কিং ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর। পার্কিংয়ের জন্য টাকা নেওয়া ব্যবসার প্রসারের সহায়ক। সময় ও জায়গার দামের উপর নির্ভর করে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য টাকা দিতে হলে মানুষ কম সময় গাড়ি রাখার সুযোগ পাবেন এবং অন্য ক্রেতারা ঐ জায়গা ব্যবহার করতে পারবেন। একই জায়গায় অনেক বেশি ক্রেতাকে সুবিধা প্রদান করার কারণে দোকানীদের বিক্রি বাড়ে। কম সংখ্যক গাড়ী বেশি সময়ের জন্য পার্কিং করা হলে অল্প পরিমাণ জায়গায় অনেক গাড়ী পার্কিং করায় জায়গার সর্বোচ্চ ব্যবহার হয়।
গাড়ী বেশি সময় পার্কিংয়ে রাখার অর্থ হচ্ছে জায়গার অপব্যবহার করা। পার্কিং বিনামূল্যে বা কম মূল্যে হওয়ায় মানুষ বেশি সময়ের জন্য গাড়ি রাখতে উৎসাহিত হবে। এক্ষেত্রে অনেকেই গাড়ি রাখা জায়গা পেতে সমস্যায় পড়বেন। অল্প মানুষ বেশি সময় ধরে দোকানে অবস্থান করলেই ব্যাবসায়ীদের সুবিধা হতে পারে না। ব্যাবসায়ীদের জন্য প্রয়োজন অনেক বেশি ক্রেতা সমাগম। এর জন্য পার্কিং স্থানে যতবেশি গাড়ি রাখার সুযোগ তৈরি করা যাবে তত বেশি মানুষ আসার সুযোগ পাবেন। সেক্ষেত্রে সময়ানুযায়ী পার্কিং ফি বৃদ্ধি করা হলে মানুষ কম সময়ের জন্য গাড়ি পার্ক করবে।
রাস্তায় প্রাইভেট গাড়ী পার্কিং কমানো গেলে অনেক মানুষ যাতায়াত সুবিধা পাবে। পার্কিংয়ের খরচ বৃদ্ধি পেলে মানুষ কম সময় গাড়ি রাখবে এবং যাদের বেশি প্রয়োজন তারা সবসময় গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন। পার্কিং করার জায়গা একই পরিমান হওয়া স্বত্বেও গাড়ি কম সময় রাখার কারণে অনেকে মানুষ গাড়ি পার্কিং করার সুবিধা পাবেন। এর ফলে আরো বেশি মানুষ দোকান, কেন্দ্র বা হোটেলে আসবেন। এতে গাড়ী ব্যবহারকারী ক্রেতারা কম সময় থাকলেও ব্যবসা বাড়বে, গাড়ির ভীড় বাড়বে না।
গাড়ির আধিক্যে পার্কর্িংয়ের জায়গা না পাওয়া গেলে বিনামূল্যে পার্কিং সুবিধা দেয়া হলেও ব্যবসায়ীদের ক্রেতা সংখ্যা বাড়বে না। পার্কিংয়ের খরচ বৃদ্ধির মাধ্যমে অল্প জায়গায় বেশি গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা করা সম্ভব। দুইভাবে পার্কিং সুবিধা হতে পারে বিনামূল্যে অথবা সহজে জায়গা করে দেওয়া। বেশির ভাগ মানুষ চায় গাড়ি পার্কিং এর জায়গা পেতে। পার্কিংয়ের সঠিক মূল্য পরিশোধ করতে হলে সময়ের কথা বিবেচনা করেন বিষয়টি অনেকেই আনন্দের সাথে গ্রহণ করবেন। এতে যারা কম সময়ের জন্য দোকানে যেতে চায় বা কম সময় থাকতে চায় তারা সহজে গাড়ি পার্কিং করার সুযোগ পাবেন। আর কম জায়গায় পার্কিং এর ব্যবস্থা করতে পারলে ব্যবসায়ীরা পন্য সামগ্রী রাখা ও ব্যবস্যা সমপ্রসারণ ও ক্রেতাদের চলাফেরার জন্য আরো বেশি জায়গা দিতে পারবেন। বিনামূল্যে পার্কিং ব্যবসার জন্য লাভজনক নয়। খরচ বৃদ্ধি পেলে পার্কিংয়ের জায়গা সব সময় কিছু খালি থাকবে। ফলে ক্রেতারা সহজে মার্কেটে আসতে পারবে বিধায় ব্যবসায়ীর লাভ হবে।
ডিইউটিপি প্রকল্প
ডিইউটিপি এর প্রকল্প (২০০০-০৫) পরবর্তী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ''প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহারের অন্যতম সমস্যা পার্কিং। যাতায়াত করার চেয়ে প্রাইভেট গাড়ি পার্কিং এর জন্য বেশি জায়গা দখল করে।'' গবেষণায় দেখা যায় প্রাইভেট গাড়ি ৯৫ ভাগ সময় পার্কিং অবস্থায় থাকে। প্রাইভেট গাড়ী পার্কিংয়ের জন্য প্রচুর জায়গার প্রয়োজন পড়ে। পার্কিংয়ের জায়গা এবং পার্কিং অবকাঠামো নির্মাণে প্রচুর খরচ হয়। কিন্তু জায়গা এবং অবকাঠামো নির্মাণের খরচ অনুযায়ী পার্কিং ফি সঠিকভাবে গ্রহণ না করায় পার্কিংয়ের চাহিদা বেড়েই চলেছে। জায়গা ও সময় অনুসারে পার্কিংয়ের সঠিকমূল্য নির্ধারণ এবং প্রাইভেট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পার্কিংয়ের চাহিদা বাড়তেই থাকবে।
No comments:
Post a Comment