RICKSHAW

Tuesday, May 26, 2009

বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়নে অদুরদর্শী পরিকল্পনা অন্তরায়

দীর্ঘদিন পর কিছু ঋণ প্রদানকারী সংস্থা রেলের উন্নয়নে ঋণ প্রদান করে। কিন্তু এ সকল ঋণ সহায়তায় রেল উন্নয়নে স্টেশন রি মডেলিংয়ের নামে শত শত কোটি টাকা কিভাবে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করা হচ্ছে তা একটি স্টেশনের উদাহরণ থেকেই অনুমান করা যথেষ্ট। রি মডেলিং প্রকল্পের একটি স্টেশন আখাউড়া রেলওয়ে জংশন। এই জংশন স্টেশনের রি মডেলিং বাবদ বরাদ্দ দেয়া হয়, ৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। একই সঙ্গে ওই স্টেশনের ইন্টার লকিং সিগন্যালিং ব্যবস্থা প্রবর্তন বাবদ আরও ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। অর্থাৎ সর্ব সাকুল্যে ২৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা স্টেশন রি মডেলিং বরাদ্দ দেয়া হয়। এই রি-মডেলিংয়ের টাকা থেকে অনধিক ২৫ কোটি টাকায় একটি অত্যাধুনিক রেল ইঞ্জিন ক্রয় বা সংগ্রহ করেও অবশিষ্ট টাকা দিয়ে কাঁচামালের যোগান দেয়াসহ রেলওয়ে কারখানায় ওভার টাইম চালু করে কমপক্ষে ২০টি ইন্টারসিটি ট্রেনের অকেজো শোভন চেয়ার কোচ মেরামত করা যেত। ওই মেরামতকৃত কোচ ও সংগ্রহকৃত ইঞ্জিনের সমন্বয়ে গঠিত আন্তনগর ট্রেনটি ঢাকা চট্টগ্রাম লাইনে চলাচলের ফলে রেলের বার্ষিক আয় বৃদ্ধি পেতো প্রায় ১৪ কোটি ২৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার উর্ধে। অথচ দেড়শ কোটি টাকার অধিক ভর্তূকি প্রতিষ্ঠানে এহেন রি-মডেলিং মানে রেলওয়েকে বাকীর খাতায় শূন্যই গুনতে হচ্ছে।




www.dhaka-rickshaw.blogspot.com/ Dhaka Rickshaw
www.dhaka-transport.blogspot.com/ Pro-people Transport Plan www.dhakanewspapers.blogspot.com/ All Newspapers on one click


Syed Saiful Alam
Save The Environment Movement
shovan1209[at]yahoo.com

বর্তমান সময়কালে অন্য যেসব স্টেশন রি-মডেলিংয়ের কাজ হয়েছে বা হচ্ছে তন্মধ্যে নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, বি-বাড়িয়া,শায়েসত্মাগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, কুমিল্লা, লাকসাম ও ফেনী স্টেশন উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া পশ্চিমাঞ্চলেও এরকম বহু স্টেশন টেকসই কাজের পরিবর্তে নিম্নমানের কাজ করিয়ে অধিক অর্থ অপচয়েরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঋণের টাকা যখন সিলেটের শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন রি-মডেলিং করা হচ্ছে, ঠিক সমসাময়িক ঘটনা হচ্ছে অর্থের অভাবে সিলেট-খাজাঞ্চি-ছাতক রেলপথ সংস্কার করা যাচ্ছে না, ফলে তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিগত কয়েক মাসে রেল লাইন সংস্কারের অভাবে অনেক দূর্ঘটনা হয়েছে এবং অনেক মানুষ আহত হয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে মানুষ চলাচল করছে। অথচ টাকা নেয়া হচ্ছে স্টেশন আধুনিক করা জন্য। মানুষ যদি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট গনত্মব্যে পৌছতে পারে তবে স্টেশনে বসে থাকবে কেন? স্টেশন আধুনিক করা অপেক্ষা রেল লাইন উন্নয়ন করা জরুরি, জরুরি রেলের বগি ও ইঞ্জিন বাড়ানো।

একদিকে বলা হচ্ছে ঋণ ছাড়া চলা সম্ভব নয়, অপর দিকে এমন খাতে ঋণ দেওয়া বা নেওয়া হচ্ছে যা অপ্রয়োজনীয়। যেসব স্টেশন রি-মডেলিং করা হয়েছে সেসব স্টেশনের আয় বৃদ্ধি হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা নিরীক্ষা, মূল্যায়ণ করে জনসম্মুখে তুলে ধরা প্রয়োজন। কারণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মালিক জনগণ। রেলওয়ে জাতীয় সম্পদ বিধায় রেলের মালিকও আপামর জনগণ এবং তাদের এ তথ্য জানার অধিকার রয়েছে। আন্তজার্তিক অর্থলগ্নিকারী (ঋণ বাণিজ্যিক) প্রতিষ্ঠানগুলো রেলওয়ের চেয়ে সড়ক পথের উন্নয়নে বেশী আগ্রহী। দ্বিতীয়ত ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলো শর্তসাপেক্ষে রেলওয়ের উন্নয়নখাতে সরকারকে ঋন দিয়ে থাকে যা স্টেশন রি মডেলিংয়ের মত অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করা হচ্ছে। তৃতীয়ত তথাকথিত ঋণ সংস্থার পরামর্শ ও দিক নির্দেশায় অনেক উন্নয়ন গৃহীত হচ্ছে। ফলে দেশীয় অনেক প্রেক্ষাপটের বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতা না থাকায়, আশানুরূপ উন্নয়ন হচ্ছে না। এক্ষেত্রে দেশীয় বিশেষজ্ঞ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের সম্পৃক্ততা জরুরি। আন্তজাতিক অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পরামর্শে বিভিন্ন উন্নয়ন নীতিমালা প্রণীত হয়। অভিযোগ রয়েছে এ সকল পরামর্শ যা দেশের শিল্প কারখানা ও সেবা খাতগুলোর উন্নয়নে সরকারকে উদ্যোগী হতে নিরুৎসাহিত করে। মুক্ত বাজার অর্থনীতির সুবাদে এ দেশকে বিদেশী পণ্যের বাজারে পরিণত করতে দেশের শিল্প কারখানা ও সেবা খাতগুলোকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়ে পরিশেষে সবকিছু ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেয়ার পরামর্শ প্রদানই এসব সহযোগীদের মুখ্য উদ্দেশ্য বলে অনেকেই উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে।

বিগত দিনে উন্নয়নের নামে এই এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের পরামর্শেই খুলনা বাগেরহাট, মোগল হাট লালমনির হাট, ভেড়ামারা-রায়টা, নরসিংদী-মদনগঞ্জসহ বিভিন্ন রেলপথ বন্ধের মাধ্যমে সংকোচন করা হয়েছে। রেলওয়েতে দীর্ঘদিন ধরে স্টেশন রিমডেলিং এর মতো বিদেশী ঋণপ্রদানকারী সংস্থার ঋণের অর্থ প্রকৃতপক্ষে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করা হচ্ছে যা আদৌ এ মুহূর্তে জরুরী প্রয়োজন ছিলনা বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করে। দুঃখজনক হলেও সত্য যেসব খাতে বিনিয়োগ করলে রেলওয়ে সেবাকে জনগণের কাছে সহজলভ্য ও রেলের রাজস্ব বৃদ্ধিতে সরাসরি সহায়ক হতো সেসব খাতে যথেষ্ট বরাদ্ধ নেই। ফলে রেলের অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয়িত ঋণের টাকা সুদে আসলে পরিশোধ করতে বছরের পর বছর চলে যাবে।


বস্তুতপক্ষে ঋণপ্রদানকারী সংস্থার কারণে রেলের সত্যিকার উন্নয়ন হয়ে উঠেছে বাধাগ্রসত্ম, যা কারো কাম্য নয়। রেল লাইনের সংস্কার নেই, বগি নেই, ইঞ্জিন নেই ইত্যাদি সমস্যা জর্জরিত রেলওয়ে এহেন বেহাল দশা থেকে উত্তোরণে উপযুক্ত খাতে ঋণের টাকা ব্যয় না করে শুধু স্টেশন রিমডেলিং করার অর্থ হলো আশীতিপর বৃদ্ধাকে মেকাপ লাগিয়ে অষ্টাদশী তরুনী বানানোর ব্যর্থ চেষ্টারই নামানত্মর মাত্র। ঋণ গ্রহনের পূর্বে অবশ্যই বিবেচনা করা প্রয়োজন এ অর্থ কিভাবে পরিশোধ করা হবে? এ ঋণ হতে কি পরিমান লাভ হবে? যদি দেখা যায়, স্টেশন আধুনিকায়নের জন্য ঋণ প্রদান করা হচ্ছে, কিন্তু রেল লাইন সংস্কার, ইঞ্জিন বা বগি ক্রয়ের সমস্যার জন্য রেল যোগাযোগ বিঘি্নত করা হচ্ছে। তবে এ ধরনের ঋণ গ্রহন না করা উচিত। মৌলিক প্রয়োজনের পরিবর্তে এ ধরনের ঋণ গ্রহন অপচয়। কারণ এ ধরনের অহেতুক ঋণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে দূর্বল করা হয়।


এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণের টাকায় বাংলাদেশ রেলওয়ের চার বছর মেয়াদী চলমান সংস্কার কর্মসূচীকে ঘিরে খোদ রেলওয়েসহ বিভিন্ন মহলে অসন্তোষ বিরাজ করছে। অভিযোগ উঠেছে, এডিবি'র ঋণ ও পরামর্শ সংস্কারের নামে বাংলাদেশ রেলওয়েকে পরিকল্পিতভাবে পঙ্গু করার পায়তারা চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন মহলের অভিযোগ এবং অনুযোগ সর্তকতার সাথে বিবেচনা করা প্রয়োজন। কারণ যে সকল প্রতিষ্ঠানে এডিবি এবং বিশ্বব্যাংক পরামর্শ দিয়েছে তা আশানুরূপ ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের বৃহত্তর স্বার্থে এডিবির ঋণে চলমান সংস্কার কর্মসূচী মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।




www.dhaka-rickshaw.blogspot.com/ Dhaka Rickshaw
www.dhaka-transport.blogspot.com/ Pro-people Transport Plan www.dhakanewspapers.blogspot.com/ All Newspapers on one click


Syed Saiful Alam
shovan1209[at]yahoo.com

No comments: